জামায়াত থাকবে অন্য নামে হলেও
২ ডিসেম্বর ২০১৫১.
বিতর্কিত মওদুদীর বিতর্কিত তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত জামায়াত কখনো সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি৷ জামায়াতের নেতারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন৷ মানুষ হত্যা, লুট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো ভয়াবহ অপরাধ করেছেন৷ অপরাধী বাহিনী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস গঠন করেছেন৷ জামায়াত নেতারা নেতৃত্বে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ করিয়েছেন৷
বলছি ১৯৭১ সালের কথা, বাংলাদেশের জন্ম সময়ের কথা৷ এত বড় অপরাধ করেও জামায়াত কখনো অনুশোচনা করেনি৷ দাম্ভিকতা দেখিয়েছে৷ সামরিক শাসকদের সহায়তা তাদের দাম্ভিকতা প্রদর্শনে সহায়তা করেছে৷
২.
স্বাধীনতার এত বছর পরে এসে জামায়াত এখন সত্যিকারের বিপদের মুখে৷ বড় নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডের শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন৷ অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন৷ কারাগারে আছেন অনেকে৷ ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আপস রফা করে আছেন কেউ কেউ৷ কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী আবার আওয়ামী লীগে যোগও দিয়েছেন৷
প্রশ্ন উঠেছে জামায়াতের অস্তিত্ব নিয়ে৷ জামায়াত কি টিকে থাকবে না হারিয়ে যাবে? টিকে থাকার ক্ষেত্রে জামায়াতের একটি বড় শক্তি আর্থিক সামর্থ্য৷ আবার এই আর্থিক সামর্থ্যই তাদের টিকে থাকার অন্তরায়৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই জামায়াত দেশে-বিদেশে তাদের অর্থ খরচ করছে বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির জন্য৷ ইউরোপকে ঘিরে লন্ডন থেকে তারা বিচারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে৷ সক্রিয় রয়েছে অ্যামেরিকাতেও৷ ডলার দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে, যা দৃশ্যমান৷
শুধু তাই নয়, দেশের ভেতরেও নানাভাবে অর্থ খরচ করছে৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন৷ নিয়েছেন ঠিক না, দেয়া হয়েছে নিজেরা বাঁচার জন্যে৷ কারণে, অকারণে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অর্থ তুলে দিতে দেখা গেছে ইসলামী ব্যাংককে৷ কিন্তু এ সব আর্থিক কর্মকাণ্ডে খুব একটা উপকার হয়েছে বলে মনে হয় না৷ দেশের ভেতরে যারা অর্থ নিয়েছেন, কাজ করেননি৷ দেশের বাইরে অর্থ খরচ করে বিতর্ক তৈরি করা গেলেও ‘ফাঁসি' আটকানো যায়নি৷
৩.
জামায়াতের অর্থ-সম্পদের ওপর অনেকের নজর আছে৷ বর্তমান সরকার চায় না জামায়াত বর্তমান ধারায় আরও বিকশিত হোক৷ বিএনপির সঙ্গে জামায়াতকে জড়িয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায় ক্ষমতাসীনরা৷ তারা এটাও খুব ভালো করে জানে যে, জামায়াতের ভোট কোনো দিন আওয়ামী লীগ পাবে না৷
দেশের ৩ থেকে ৫ শতাংশ মানুষ জামায়াতকে সমর্থন করে৷ তবে সংখ্যায় কম হলেও তাদের একটি শক্তিশালী কর্মী-ক্যাডার বাহিনী আছে৷ সুযোগ পেলে তারা অরাজকতা করার ক্ষমতা রাখে৷ অর্থ এবং কর্মী-ক্যাডার বাহিনীর সম্মিলন যদি আবার ঘটে, তবে তা সরকারের জন্যে চিন্তার কারণ হতে পারে৷ সরকারের টার্গেট জামায়াতের আর্থিক সামর্থ্য দুর্বল করে দেয়া৷ কর্মী-ক্যাডারদের দমন-পীড়ন করে কোণঠাসা করে রাখা৷ এ পথে সরকার অনেকটা সফল হয়েছে৷
সরকার জামায়াতের সম্পদ, জামায়াতের হাত থেকে নিয়ে নিতে চায়৷ নেয়ার কর্মপরিকল্পনা বলতে এখন পর্যন্ত কিছু দৃশ্যমান নয়৷ প্রথম পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও মতাদর্শের অনুসারীরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পারে৷ একটা অরাজকতার সম্ভাবনা প্রবল৷ সুন্দরভাবে কাজটি সরকার করতে পারবে বলে মনে হয় না৷ আর সাংগঠনিকভাবে জামায়াত পুরোপুরি নির্মুল হয়ে যাক সরকার এটাও চায় না৷ নিষিদ্ধ যদি করাও হয়, সরকার চাইবে জামায়াত অন্য নামে রাজনীতিতে ফিরে আসুক৷
সরকারের মাথাব্যথা জামায়াতকে নিয়ে নয়৷ সরকারের যাবতীয় চিন্তা বিএনপিকে নিয়ে৷ সরকারের চাওয়া রাজনেতিক দল আওয়ামী লীগ থাকবে, নিয়ন্ত্রিত অর্থ-সম্পদহীন জামায়াত থাকবে, নিয়ন্ত্রিত জঙ্গি থাকবে, দুর্বল জাতীয় পার্টি থাকবে, বিএনপি থাকবে না৷ বিএনপিকে পুরোপুরি নির্মূল করতে চায় সরকার৷ সে অনুযায়ী সব কর্মপরিকল্পনা চলছে৷ সরকারের কর্মকৌশলের অংশ হিসেবেই জামায়াত টিকে থাকবে, হয়ত অন্য কোনো নামে৷ থাকবে না বর্তমানের শক্তি ও অর্থ-সম্পদ৷ বিএনপি না থাকলে জামায়াতকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ৷ যদিও রাজনীতি কখনো এত পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে না৷
গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে আপনি কী একমত? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷